
সংসার স্মৃতি
৭ বছরের সংসার সারা জীবনের স্মৃতি
লুৎফা তাহের
১৪ নভেম্বর। তাহেরের জন্মদিন। এমনিতেই তাহেরের সঙ্গে আমার জীবন খুবই অল্প দিনের। এর মধ্যে তাহেরের যে জন্মদিনটি আমাদের জীবনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সেটির কথাই বলি।
১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর। সেদিন ছিল ঢাকার প্রবেশদ্বার কামালপুর অপারেশনের তারিখ। তাহের বুঝেছিলেন উত্তর সীমান্তে পাকিস্তানের সবচেয়ে দুর্ভেদ্য দুর্গ কামালপুরের পতন ঘটিয়ে কামালপুর-শেরপুর, জামালপুর-টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকা পৌঁছা যায় সবচেয়ে দ্রুত।
(একটি কথা বলি, যুদ্ধের সময় আমি বরাবর তাহেরের সঙ্গে ক্যাম্পেই থাকতে চাইতাম। কিন্তু সঙ্গে আমার মেয়ে নীতু, তাহেরের ছোট দুই বোন ডলি, জলি এবং আরও মেয়েরা থাকাতে আলাদা থাকতাম। তবে বরাবরই ছিলাম যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি) যাই হোক, কামালপুর অপারেশনেই জয়লাভ হবে এ বিষয়ে আমরা সবাই ছিলাম নিশ্চিন্ত। কারণ এর আগে তাহের সবকটি অপারেশনেই জয়ী হয়েছিল। তাহেরের সঙ্গে পরিকল্পনা হলো। ১৪ তারিখ বিকেলে আমি ওদের কাছে যাবো। বীর যোদ্ধাদের সঙ্গে মিলে অপারেশনের জয় আর তাহেরের জন্মদিন পালন করবো। মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়ার জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছিলাম। খবর এলেই রওনা দেবো। এমন সময় ১৪ তারিখ দুপুর একটার দিকে বিএসএফ-এর একজন সামরিক কর্মকর্তা কর্নেল রঙ্গরাজ ও তার স্ত্রী এবং একজন শিখ মেজর এসে আমাকে যুদ্ধের ভয়াবহতা-বিপদাপদ সম্বন্ধে অনেক উপদেশ ও সান্ত¦নার সুরে কথাবার্তা শুরু করলেন। আমি বললাম, আসল ঘটনাটা খুলে বলুন। আমরা তো যেকোনো ঘটনার জন্যে প্রস্তুত রয়েছি। তখন তারা বলল, যুদ্ধে তাহের আহত হয়েছে। শুধু তাঁর পায়ে গুলি লেগেছে।
তাহেরকে গৌহাটি কমবাইন্ড সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই আনোয়ারকে নিয়ে গৌহাটি গেলাম। আমাদের দেখে মনে হলো তার বেদনা অনেকখানি উপশম হয়েছে। আমি বললাম দেখি কি হয়েছে? তারপর চাদর উঠিয়ে দেখলাম তাহেরের একটি পা নেই। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে ওর যে পায়ে গুলি লেগেছিল সেই পাটিই ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর এসে পাকিস্তানি গোলায় উড়ে গেলো। বিষয়টি আমার কাছে রীতিমতো অকল্পনীয়। কিন্তু ধৈর্য হারাইনি। তাহেরকে বলেছিলাম-ঠিক আছে প্রাণে তো বেঁচে আছো। তাহের এক মাস ঐ হাসপাতালে ছিল। ওই অসুস্থতার মধ্যেই ডাক্তার ডেকে আমাদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করার জন্যে বললেন। এই হাসপাতালে তাকে এক মাস থাকতে হয়েছিল। ক্ষতস্থানে ড্রেসিংয়ের সময় সে নিজে তাকিয়ে থাকতেন। নিজের ঐ অবস্থাতেও আশপাশের আহতদের সাহস যোগাতেন, খাবারের অসুবিধা তদারক করতেন। সে সময় আমার আত্মীয় আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি জনাব আবদুস সাত্তার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজুদ্দীনের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কিছুতেই তাহের তা গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।
পা হারিয়ে তাহেরের কিন্তু কোনো দুঃখ বা ক্ষোভ ছিল না। সব সময় বলতেন-আমার এই পা দুটোর ‘চূড়ান্ত ব্যবহার’ হয়েছে। একবার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা এলেন এবং বললেন, ‘স্যার আমরা যারা যুদ্ধে পঙ্গু হয়েছি তারা সকলে মিলে একটা সংগঠন করতে চাইছি, আপনি হবেন তার প্রধান।’ প্রচ- ক্ষেপে গিয়েছিলেন। ‘পঙ্গু? কে পঙ্গু? দুটো পা যার আছে আমি তার চেয়েও বেশি কর্মক্ষম।’
এই মানুষটার মধ্যেই ছিল অদ্ভুত এক কোমলতা। যখন যেখানেই থাকুক আমাদের বিয়ের দিনটি ঠিক মনে রাখতো। আমাদের বিয়ে হয় ৭ই আগস্ট, ১৯৬৯ সালে। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ রসায়ন বিভাগে এম.এস.সি. পড়ছি। ও তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিল। মজার ব্যাপার হলো, বিয়ের কার্ড ছাপা হয়ে যাবার পরে তাহের মেজর পদে উন্নীত হয়। বিয়ের ১৫ দিন পরেই তাহের চিটাগাং চলে যায়। সেখান থেকে ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি ও পেশোয়ারের মাঝামাঝি অবস্থিত আটক ফোর্টে বদলি হয়। এর মধ্যে আমি আর ইউসুফ ভাইয়ের স্ত্রী টিকাটুলিতে একটা বাসা নিয়ে থাকছি। একদিন পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরছি প্রায় সন্ধ্যায়। হঠাৎ পিছন থেকে কে একজন আমার চোখ ধরে ফেললো। তাকিয়ে দেখি, হঠাৎ ঝড়ের মতোই তাহের উপস্থিত। আমার বিস্ময়ভরা দৃষ্টি দেখে বললেন, তোমাকে সারপ্রাইজ দিলাম। তারপর অনেক কথার পরে বললেন,…তোমার জন্য দুটো খবর আছে। একটা সুসংবাদ একটা দুঃসংবাদ। সুসংবাদ হলো আমি উচ্চতর কমান্ডো ট্রেনিংয়ে ৬ মাসের জন্য আমেরিকা যাচ্ছি। এটা অত্যন্ত কস্টলি ট্রেনিং এবং একাই বাঙালি অফিসার মনোনীত হয়েছি। আর দুঃসংবাদ হলো, আবার আমাদের বিচ্ছেদ হবে। যে কয়েকদিনের জন্য তিনি এসেছিলেন, পুরো সময়টা আমরা একত্রে কাটিয়েছি। প্রায় বিকেলে টিকাটুলির রাস্তায় হাঁটতাম। তখন তাহের আমার হাত ধরে হাঁটতো। আমি বললাম-তুমি কি এটা প্যারিসের রাস্তা পেলে? তাহের ভিতরে ভিতরে ছিল রোমান্টিক। বললো, ঠিক আছে আমাদের মধুচন্দ্রিমা হবে ইউরোপেই। সত্যি কথা বলতে, তাহের আর আমার বিবাহিত জীবনের লন্ডনে কাটানো দুটো মাসই ছিল সবচেয়ে আনন্দের। সে সময়গুলো ছিল শুধুই আমাদের। ছুটিতে তাহের লন্ডনে চলে আসার পূর্বে তার ভাইকে চিঠি লিখে বলেছিল, ‘আমি আমার বউকে চাই লন্ডনে।’ লন্ডনে আমার এক ভাই ও তাহেরের এক বোন ছিল। আমি গেলাম সেখানে। আবার আমাদের দেখা হলো। ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে।
আমার প্রথম সন্তান জন্মের আগেই তাহের বলেছিল, আমাদের মেয়ে হবে। তার নাম হবে জয়া। হলোও তাই।
ছেলেমেয়েদের জন্মদিনে তাহের ঠিক ঠিক উপহার নিয়ে আসতো। কিন্তু ঈদে সবাইকে নতুন কাপড় দিতেই হবে, তা কিন্তু নয়। বলতো, এই দিনে কতজনেই তো নতুন কাপড় পাচ্ছে না। তিনি কেনাকাটা করতেন না। তবে আমার এবং সন্তানদের জন্য হঠাৎ শখের উপহার নিয়ে আসতেন। লন্ডন থেকে ও আমাকে দুটো চমৎকার কার্ডিগান কিনে দিয়েছিল। ও দুটো ছিল আমার বড়োই পছন্দের। ১৯৭১-এর ৯ ফেব্রুয়ারি আমি পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে এলাম। তখন কার্ডিগান দুটো সঙ্গে আনিনি। পরে ১৯৭১-এর জুলাই মাসে তাহের যখন পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসলো দেশে, তখন সঙ্গে আর কিছুই আনেনি। কিন্তু ঐ অবস্থাতেও আমার সেই শখের কার্ডিগান দুটো সঙ্গে নিয়েছিল। মাঝপথে অবশ্য মিসেস মঞ্জুরকে (মেজর জেনারেল মঞ্জুরের স্ত্রী) কাঁধে তুলে হাঁটবার সময় ভার কমাবার জন্য কার্ডিগান দুটো ফেলে দিয়েছিল। মনে আছে, তাহের শেষের দিকে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কাজ, রাজনীতি নিয়ে। আমি মাঝে মাঝে অভিমান করতাম। ও তখন আমাকে বলতো-আমাকে পেতে হলে রান্নাঘর থেকে বের হতে হবে। আমাকে পেতে হলে আমার কাজের সঙ্গে মিশতে হবে। আমার দুঃখ হয়, আজো আমি তাহেরের স্বপ্ন, তাহেরের দেওয়া কাজ সমাপ্ত করতে পারিনি। সংসারের জন্যে, বাচ্চাদের জন্যে তাহের কিছুই রেখে যেতে পারেনি। সব সময় বলতো, ‘চিন্তা করো না। সমগ্র জাতির ভাগ্যের সঙ্গে আমাদের ভাগ্য জড়িত।’ জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য আমাকে এখন সংগ্রাম করতে হচ্ছে। তাই তাহেরের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমি সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারছি না।
তাহেরের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলাম ওতপ্রোতভাবে। ওর লেখার ডিকটেশন নেওয়া, ওর টেলিফোন রিসিভ করা থেকে ওর দৈনন্দিন রুটিনের সব কাজেই ছিল আমার অংশগ্রহণ। এমন কি অল্প সময়ের জন্য বাবার বাড়ি যেতে চাইলে ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়তো।
তাহেরের সঙ্গে আমার শেষ দেখা ১৯ জুলাই, ১৯৭৬ সাল। ওর ফাঁসির কয়েক ঘণ্টা আগে। ২০ জুলাই ভোর ৪টার দিকে ওর ফাঁসি হয়। আমরা শুনেছিলাম ‘বিচারে’ তাহেরের ফাঁসির রায় হয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করিনি। আমার মনে মনে প্রস্তুতি ছিল, তাহেরের যাবজ্জীবন কারাদ- হবে। এর ৭ মাস আগে তাহের গ্রেপ্তার হয়। ওর কোনো খোঁজ-খবরই ঠিকমতো পাচ্ছিলাম না। আর এই সাত মাসে আমাদের সঙ্গে ওকে দেখা করতেও দেওয়া হয়নি। একবার শুধু দূর থেকে দেখেছি ও কোর্টে যাচ্ছে। গরাদের ওপারে। ও আসতে চেয়েছিল কাছে। কিন্তু আসতে দেওয়া হয়নি। হাত নেড়ে শুধু বলেছিল ভালো থেকো। তাহেরকে যখন ধরে নিয়ে যায় তখন আমাদের ছোট ছেলে মিশু ছিল অত্যন্ত ছোট। বাচ্চাদের খুব ভালোবাসতো তাহের। জেল জীবনের ছয় মাস পর যখন আমাদের শেষ দেখা হয় তখন মিশু একটু বড়ো হয়েছে। মিশু তার নানা বাড়িতে থাকায় ওকে দেখাতে পারবো না ভেবে ওর একটা ছবি নিয়ে গিয়েছিলাম তাহেরকে দেখাবো বলে। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ নিতে দেয়নি। শুধু ওর জন্য কটা আম নিতে দিয়েছিল। আমরা তাহেরের সেলে ঢোকা মাত্র তাহের হইচই বাধিয়ে দিলো। বললো-জেলার সাহেব, আমার স্ত্রী, মা এবং আত্মীয়স্বজন এসেছে, তাদের বসার জন্য চেয়ার দিন।
যাই হোক, ১৯ তারিখ দুপুর ৩টায় আমরা কারাগারে গেলাম। আমি, আমার মেয়ে, এক ছেলে, আমার শ্বাশুড়ি, আমার ভাসুর, আমার বড় জা, মেজো জা, আমার ভাই-আমরা সবাই গেলাম। আমার ছোট ছেলে মিশুর বয়স তখন ৯ মাস। ওকে রেখে গিয়েছিলাম মায়ের কাছে। আমাদের দেখে বড়োই উৎফুল্ল হলো। আমার শ্বাশুড়ির কাছ থেকে গ্রামের জমিজমা ফসলের খবর নিলো। আর বারবার শুধু বললো, চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে। ও এত স্বাভাবিক আর প্রাণবন্ত ছিল যে, আমার মাথাতেই আসেনি আমার স্বামীর ফাঁসি হতে পারে।
সে তার লেখা একটা শেষ চিঠি আমাদের উদ্দেশে জোরে জোরে পড়ে শোনালো। সবার খোঁজ খবর নিলো। এর মধ্যে জেল কর্তৃপক্ষ এসে তাড়া দিলোÑসময় শেষ। তাহের বললো-আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে একটু একান্ত সময় চাই। বাকিরা সেল থেকে বের হয়ে গেলো। তাহের আমার হাত ধরে বললো, ‘তুমি এত কালো আর শুকিয়ে গেছো কেন? এত চিন্তার কী আছে? আমার স্ত্রী হিসেবে তোমাকে আরও সাহসী হতে হবে। আমার স্ত্রী হিসেবে তুমি গর্ববোধ করবে। সবাই আছে। সবার মধ্যেই বেঁচে থাকবো। তোমরাও বেঁচে থাকবে। আমিতো কোনো বিচ্ছিন্ন রাজনীতি করিনি। আমার রাজনীতি ছিল সবার জন্য।’ এখনো ভাবলে আমি অবাক হই, তাহের একবারও বলেনি-আজ আমাদের শেষ দেখা। আর কিছুক্ষণ পরেই ওর ফাঁসি হয়ে যাবে। উল্টো হাসলো। জেলে থাকার সময়ে টুকটাক মজার অভিজ্ঞতার কথা বললো। বাচ্চাদের খোঁজ নিলো। বললো, ওদের দিকে খেয়াল রেখো। তারপর ফিরে আসার সময় বললো, ‘আবার দেখা হবে।’ ওর স্বতঃস্ফূর্তটা আর প্রাণবন্তটা আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল যে, আমার একবারও মনে হয়নি আর কিছুক্ষণ পরেই তাহেরের ফাঁসি হবে। পরে শুনেছি, ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে ও শেভ করেছে, গোসল করেছে, আমাদের নেওয়া আম কেটে সবাইকে খাইয়েছে। এমনকি আগের রাতে ওকে যখন তওবা পড়াতে আসে, ও বলেছে-‘আমি তওবা কেন পড়বো? আমি তো কোনো ভুল করিনি। আপনারা যান। আমি ঘুমবো। সময় মতো ডেকে দেবেন।’ সেই রাতে আমি মেজর জেনারেল মঞ্জুরের বাসায় ফোন করি। উনি ফোন ধরেননি। উনার স্ত্রীর বললেন-‘আমরা কি করবো? আপনার স্বামীতো নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন।’ আমি বলেছিলাম, আমি কিছু করতে বলি না। তাহেরের জন্য আমি কারো কাছে যাইনি। কিন্তু কি হতে যাচ্ছে তা কি আমি জানতে পারি না? পরে মেজর জেনারেল মঞ্জুর আমাকে বলেছিলেন-‘ভাবি, আমি সেদিন বাসাতেই ছিলাম। কিন্তু আপনাকে কি উত্তর দেবো? তাই ফোন ধরিনি।’
২০ তারিখ ভোর ৬টায় আমি আবার ফোন করেছিলাম মেজর জেনারেল মঞ্জুরের বাসায়। উনি বললেন-‘ভাবি, তাহের যদি এখনো বেঁচে থাকে তো আমি দেখবো।’ এ কথার অর্থ আমি কিছুই বুঝিনি। আর পরে তো জানলাম, তাহের ততোক্ষণে নেই। ভোর ৪টার দিকে ওর ফাঁসি হয়েছে। মৃত তাহেরকেও আমি কাছে পেয়েছি অনেক পরে। ওরা আমাদের কাছে লাশ দেবে না। এখানে দাফন করতে দেবে না। আমার শ্বাশুড়ি তো রীতিমতো ঝগড়াঝাঁটিই করলেন। ফল হলো না। ওরাই ট্রাকে ওঠালেন তাহেরের লাশ। সোজা নিয়ে গেল হেলিপ্যাডে। আমাদের বললো, পিছন পিছন আসতে। হেলিকপ্টারে করে লাশ নেত্রকোনায় তাহেরদের বাড়িতে পৌঁছে দিলো। ঐ হেলিকপ্টারে উঠে আমি তাহেরকে দেখলাম প্রথম। দেশের একজন বীর শীর্ষস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কতোটা অসম্মানিত হতে পারে চেয়ে চেয়ে দেখলাম। একটা খাটিয়ার ওপর শুয়ে সে। মাথা, পা বেরিয়ে, গায়ের ওপর শুধু জেলখানার একটা কাপড় দেওয়া।
একটা খটকা আমার প্রায়ই লাগে। বিষয়টি হাস্যকরও বটে! রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাহেরের ফাঁসি হলো। কিন্তু আজ যখন আমার নামে আসে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র, তাতে লেখা আপনার স্বামীর জন্য এ দেশ গর্বিত। তা কি করে হয়?