top of page

ঐতিহাসিক রায়

তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ

১৯৭৬ সালে বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল এম এ তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, তাহেরসহ অন্যদের বিচার ছিল লোক দেখানো ও প্রহসনের নাটক। এটা কোনো বিচার হয়নি। তাই বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচার-প্রক্রিয়া ও সাজা ছিল অবৈধ। বিচার ও সাজা বাতিল করা হলো।
গত ২২ মার্চ ২০১১ বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালত অভিমতে বলেছেন, ওই বিচার প্রথম থেকেই অবৈধ, আর পুরো বিচারটি ছিল একটি বিয়োগান্ত নাটক ও বানানো বিচার।
বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, তাহেরের তথাকথিত বিচার ও ফাঁসি দেওয়ার ঘটনা ঠান্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড। ওই বিচার ও হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। একই সঙ্গে তাহেরকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি কথিত ওই সামরিক আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ও অন্যদের রিটের ওপর শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণা করেন।
ঘটনার বর্ণনা করে রায়ে বলা হয়, ১৯৭৬ সালের ১৪ জুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৭ জুলাই তাহেরকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু তাহেরকে যে আইনে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, সে আইনে ওই সময় মৃত্যুদণ্ডের কোনো বিধান ছিল না। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর ’৭৬-এর ৩১ জুলাই মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়। তাই আইনগতভাবে ওই দণ্ড ছিল অবৈধ। তথাকথিত ওই আদালতের বিচারক আবদুল আলী ও অন্যরা বলেছেন, বিচারের সময় তাঁদের সামনে কোনো কাগজ বা নথিপত্র ছিল না। এ ছাড়া আসামিরা জানতেন না যে তাঁদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ। তাঁদের পক্ষে বক্তব্য দিতে কোনো আইনজীবীও দেওয়া হয়নি। এসব বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল ও এর কার্যক্রম ছিল অবৈধ। তথাকথিত ওই বিচার সংবিধানের ২৭, ২৯, ৩০, ৩২, ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার পরিপন্থী।
এজলাসের ঘড়িতে বেলা পৌনে ১১টা। এজলাসে আসেন মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ। সঙ্গে ছিলেন জাসদের সভাপতি ও রিট আবেদনকারী হাসানুল হক ইনুসহ অন্যরা। এরপর আসেন কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের, ভাই অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, ছেলে আবু কায়সারসহ পরিবারের সদস্যরা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহ্বুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ্দীন মালিক ও তৌহিদুল ইসলাম। রায় দেওয়ার আগের দিন অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, শাহ্দীন মালিক ও অ্যামিকাস কিউরি আক্তার ইমাম ও আবদুল মতিন খসরু শুনানিতে অংশ নেন। বেলা একটা থেকে রায় দেওয়া শুরু হয়, শেষ হয় একটা ২৭ মিনিটে। তখন এজলাসে পিনপতন নীরবতা। এ সময় আদালতকক্ষে তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
ঠান্ডা মাথায় হত্যা: তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, তাহেরের তথাকথিত বিচার ও ফাঁসি ছিল ঠান্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড। ওই বিচার ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। দুর্ভাগ্যজনক হলো, জিয়া আজ আর জীবিত নেই। তবে ওই বিচারে জড়িত ও সহযোগী অন্তত একজন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল আলী এখনো জীবিত আছেন। ওপরের নির্দেশে ও প্রয়োজনের তাগিদে ফৌজদারি বিচারের ক্ষেত্রে এমন যুক্তি খাটে না। আবদুল আলীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়েরের কথাও বলেন আদালত।
জিয়া জড়িত: রায়ে লিফশুলজ ও অন্যদের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে। যদিও বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনা এ মামলার বিচার্য বিষয় নয়। ওই সময় হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। সঠিক ইতিহাস ও সত্যের খাতিরে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এটা খতিয়ে দেখতে পূর্ণাঙ্গ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে তা যাচাই করতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হলো। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজ্ঞ, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং অবসরপ্রাপ্ত বেসামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তার সমন্বয়ে ওই কমিটি গঠন করতে বলা হয়।
তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ডে  স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানের প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের জয় বাংলা স্লোগান মুছে ফেলেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের স্থান রেসকোর্স ময়দানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিণত করেন এবং সেখানে শিশুপার্ক স্থাপন করেন। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ দেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতাবিরোধী কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমানকে দেন মন্ত্রীর পদ। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সেনা কর্মকর্তাদের উচ্চপদে আসীন করেন তিনি।
তাহেরকে শহীদের মর্যাদা: ইতিহাস ও বিভিন্ন নথিপত্র থেকে ওই প্রহসনের বিচার এবং দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যায়িত তাহেরসহ অন্যদের নাম বাদ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, তাহেরসহ অন্যরা সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষোভের শিকার ছিলেন বলেই মৃত্যুবরণ ও কারাবরণ করেছিলেন। তাঁরা জিয়ার স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠায় পাশে না থেকে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাহেরকে দেশদ্রোহের অভিযোগ মুছে দিয়ে মহান দেশপ্রেমিক হিসেবে চিহ্নিত করে শহীদের মর্যাদা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো। কথিত বিচারের মুখোমুখি হাসানুল হক ইনু, মাহমুদুর রহমান মান্না, মেজর জিয়াউদ্দিনসহ অন্যদের দেশপ্রেমিক হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার কথাও রায়ে বলা হয়।
আর্থিক ক্ষতিপূরণ বিবেচনা: রায়ে আদালত তাহেরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত বলেন, ওই সময় সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অনেকেই সেনা কর্মকর্তা এবং সরকারি চাকরিতে ছিলেন। কিন্তু গোপন বিচারের কারণে তাঁদের সাজা হয় এবং অনেকে চাকরিচ্যুত হন। যাঁদের সাজা হয়েছিল, তাঁদের পেনশনসহ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়।
শেষ পর্যায়ে: রায়ের শেষ পর্যায়ে আদালত মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বিবেকের তাড়নায় স্বেচ্ছায় লিফশুলজ বক্তব্য দিতে এসেছেন। সরকারের নয়, আদালতের আহ্বানে তিনি এসেছেন। এ নিয়ে রাজনীতিকেরা বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এটা অনভিপ্রেত। আদালত সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিচারাধীন বিষয় সম্পর্কে না জেনে এরূপ মন্তব্য সমীচীন নয়।
প্রতিক্রিয়া: রায়ের একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে, এ আশা প্রকাশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহ্বুবে আলম বলেন, বন্দুক চিরদিন কারও হাতে থাকে না। একদিন না একদিন তা চলে যায়। এতে তাঁর সংঘটিত অবৈধ কর্মকা- মুছে যায় না, তা বিচারের আওতায় আসে। তাহেরকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁকে কোনো দিন ফিরে পাওয়া যাবে না। তাঁর অবদান ও স্মৃতির প্রতি এই শ্রদ্ধা তাঁর পরিবারের জন্য সান্ত্বনা।
তাহেরের পক্ষে করা রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী শাহ্দীন মালিক বলেন, আদালত তাহেরের গোপন বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচার ও দণ্ড কার্যকর অবৈধ ঘোষণা করেছেন। দেরিতে হলেও সব সময় সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বেআইনি হত্যাকাণ্ড-যেকোনো মোড়কেই হোক না কেন, সেটা উন্মোচিত হবেই। হবেই। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও অন্যায় কোনো সমাজই কখনো মেনে নিতে পারে না। এ সত্যটি ৩৫ বছর পর হলেও প্রমাণিত হয়েছে।
ফিরে দেখা: তাহেরসহ ১৭ জনকে বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালের গোপন বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই সাজা দেওয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই ভোররাতে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কর্নেল তাহেরের ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের এবং সামরিক আদালতের বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ ২০১০ সালের আগস্টে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ আগস্ট আদালত তাহেরের বিচারের জন্য সামরিক আইনের মাধ্যমে জারি করা আদেশ এবং এর আওতায় গোপন বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ ছাড়া ২০১১ সালের শুরুতে ওই সময় গোপন বিচারের মুখোমুখি অন্য ছয় ব্যক্তি হাইকোর্টে পৃথক তিনটি রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রুল জারি করেন। এই ছয় ব্যক্তি হলেন হাসানুল হক ইনু, রবিউল আলম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিয়াউদ্দিন, হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার, করপোরাল শামসুল হক ও আবদুল মজিদ।
রিটের শুনানিকালে ১৪ মার্চ মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ, এর আগে ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম এম শওকত আলী, বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মহিবুল হক, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন এবং মৃত্যুদ- কার্যকরের সময় উপস্থিত তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ফজলুর রহমানও আদালতে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম। তাহেরের সঙ্গে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি কয়েকজনও আদালতে বক্তব্য দেন। চূড়ান্ত শুনানিতে আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, এম জহির, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আক্তার ইমাম, এ এফ এম মেসবাউদ্দিন, আবদুল মতিন খসরু, জেড আই খান পান্না ও এম আই ফারুকীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে রাখা হয়।

লুৎফা তাহেরের প্রতিক্রিয়া:
রায় শোনার পরই তাঁর মুখে ফুটে উঠল অন্য রকম এক আলো। আবার তা হঠাৎ করেই যেন মিলিয়ে গেল। সামরিক আদালতে যে বিচার করে কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, উচ্চ আদালত তা অবৈধ ঘোষণার পর এটাই ছিল মামলার বাদী তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহেরের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া।
আদালতকক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে অনুভূতি জানাতে গিয়ে লুৎফা তাহের বলেন, ‘আজ আমি আনন্দিত, গর্বিত। স্বামীর কলঙ্কমোচন হয়েছে।’ সঙ্গে সঙ্গে মন খারাপের কারণটাও বললেন। আর তা হলো স্বামী হারানোর বেদনা। লুৎফা বললেন, ‘স্বামীকে ফিরে না পাওয়ার কষ্টটা তো রয়েই যাবে। হত্যাকারীর বিচার দেখতে পারলে ভালো লাগত।’
রায় দেওয়ার সময় আদালতকক্ষের ভেতর ও বাইরে উৎসুক মানুষ ও আইনজীবীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী প্রায় ২৫ মিনিট ধরে রায় পড়ছিলেন। সবশেষে তিনি বলেন, ‘সামরিক আদালতে দেশদ্রোহের অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরের ফাঁসি অবৈধ। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান।’
উপস্থিত সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ ও আইনজীবীদের বেশির ভাগই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আনন্দধ্বনি দেন। কেউ কেউ বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্নও দেখান।
রায়ের পর আদালতকক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেন লুৎফা তাহের। কারও কারও কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। এর মধ্যে ছিলেন পরিবারের সদস্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রমুখ। সামরিক আদালতে তাহেরের বিতর্কিত বিচার নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করা মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজকে লুৎফা বলেন, ‘আমরা আপনার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ।’ জবাবে লিফশুলজ বলেন, ‘এটা ছিল আমার দায়িত্ব। আমি এমন একটা কিছুর জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম।’
লুৎফা তাহের পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে তাহেরকে দেশদ্রোহী কলঙ্কে কলঙ্কিত করা হতো। তাঁর স্ত্রী হিসেবে আমিও সেই কলঙ্ক বয়ে বেড়িয়েছি। আজ আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি একজন মহান দেশপ্রেমিক ও সম্মানিত মানুষ ছিলেন।’ আবেগাপ্লুত লুৎফা বলেন, ‘তাহেরের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আমি এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্বাস করিনি। আজকের এই দিনটির জন্য আমি ৩৫ বছর ধরে অপেক্ষা করেছি।’
মামলার আরেক বাদী কর্নেল তাহেরের ভাই অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজকের এ সময়টার জন্য শুধু আমাদের পরিবার নয়, সারা দেশের মানুষ অপেক্ষায় ছিল। ঐতিহাসিক এক রায়ে আজ সবার অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে। তাহেরকে যে কলঙ্ক দেওয়া হয়েছে, তা কোনো বিবেকবান মানুষই বিশ্বাস করেনি।’
জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের জন্য আইন প্রণয়ন করতেও সাংসদদের প্রতি আহ্বান জানান মো. আনোয়ার হোসেন।
জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সাজানো বিচারের মাধ্যমে কর্নেল তাহেরকে খুন করেছেন। এ রায়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিলম্বে হলেও বিচার হয়। দেশে আইন থাকুক আর না-ই থাকুক, মানুষ এই ঠান্ডা মাথার খুনিদের বিচার চায়।’
সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তির এই সময়ে আদালতের এই রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। এতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজকের দিনটা বাংলাদেশ ও তাহেরের পরিবারের জন্য বিশেষ দিন।’

bottom of page