


সোনার বাংলা গড়তে হলে
সোনার বাংলা গড়তে হলে
আবু তাহের
আমি একটি সোনার বাংলার চিত্র দেখেছি। চিত্র দেখার শুরু ১৯৬৮ সাল থেকে। এই চিত্র কল্পনায় কেটেছে বহু বিনিদ্র রাত্রি। এই চিত্র আমাকে রোমাঞ্চিত করেছে, উত্তেজিত করেছে। এই কল্পনায় বারবার মনে হয়েছে জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমি এক অসীম শক্তির অধিকারী। সমস্ত জীর্ণতাকে ভেঙ্গে ফেলে এই চিত্রকে রূপ দিতে সক্ষম। এ চিত্র আমাকে সাহস যুগিয়েছে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আমি জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়েছি। বাংলার মানুষের নিবিড় সংস্পর্শে এসে আমি দেখেছি তাদের উদ্যম, কষ্টসহিষ্ণুতা ও দেশপ্রেম। আমি জেনেছি বাংলার এই অশিক্ষিত, প্রতারিত জনগণই হচ্ছে প্রকৃত প্রগতিশীল। তারাই বাংলার সুপ্ত শক্তি। বাংলার এই জনগণকে আমি আমার চিত্রকল্পনার অংশীদার করতে চাই। আমি চাই তারা গভীরভাবে এই চিত্র উপলব্ধি করুক। রোমাঞ্চিত হোক, উত্তেজিত হোক। তাদের শক্তির পূর্ণ প্রকাশের মাধ্যমে ইতিহাসের যাদুঘরে বন্দী ‘ধনে ধান্যে পুষ্পে ভরা’ সোনার বাংলাকে মুক্ত করুক।
আমার সোনার বাংলা অনাহার, অশিক্ষা, শোষণ, রোগযন্ত্রণায় ভরা বিশৃংখল গ্রামসমষ্টি নয়। এতে নেই শহরের উলঙ্গ জৌলুষ, পুঁতিগন্ধময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মনের সংকীর্ণতা। আমার সোনার বাংলা প্রকৃতির স্বাভাবিক স্বচ্ছতায় সমৃদ্ধ একটি সম্পূর্ণ প্রকাশ। এই বাংলার চিত্র সম্পূর্ণরূপে নদী ভিত্তিক, নদীর সতেজ প্রবাহের স্বাভাবিকতায় সমৃদ্ধ। নদী আমাদের প্রাণ, ক্রমাগত অবহেলা ও বিরুদ্ধাচরণে সেই নদীর চঞ্চল প্রবাহ আজ স্তিমিত। আমার সোনার বাংলায় নদী সতেজ, প্রাণবান। এর দু-পাশে বিস্তীর্ণ উঁচু বাঁধ। বাঁধের উপর দিয়ে চলে গেছে মসৃণ সোজা সড়ক, রেলপথ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ লাইন। বাঁধের উভয় পার্শ্বের ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গ্রামগুলো উঠে এসেছে বাঁধের উপর। গড়ে ওঠা এই জনপদ মানব সভ্যতার একটি অপূর্ব সৃষ্টি।
নির্ধারিত দূরত্বে এক নক্সায় অনেকগুলো বাড়ি নিয়ে গড়ে উঠেছে এক একটি জনপদ। বাড়ীর সামনের ছোট্ট প্রাঙ্গণটি সবুজ ঘাসে ঢাকা, চারিদিকে ফুল। পেছনে রয়েছে রকমারী সব্জীর সমারোহ। এখানে রয়েছে একটি খোলা মাঠ। বিকেল বেলা বুড়োরা মাঠের চারিধারে বসে গল্প করেন। ছেলে-মেয়েরা মেতে উঠে নানা খেলায়। সকাল বেলা সোজা সড়ক থেকে বাসের হর্ণ শোনা যায়। হৈ চৈ করে ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায়। এই জনপদে স্থাপিত হাসপাতালে কোন দুর্গন্ধ নেই। লম্বা লাইনও নেই। সন্ধ্যার পর এই জনপদে নেমে আসে না অন্ধকারের বিভীষিকা। রাস্তায় জ্বলে ওঠে বিজলী বাতি। বয়স্করা যায় জনপদের মিলন কেন্দ্রে। পর্যলোচনা করে সারা দিনের কাজের, গ্রহণ করে আগামী দিনের কর্মসূচী। এখানে বসেই টেলিভিশনে তারা দেখে বিভিন্ন জনপদের অগ্রগতি। পায় নেতার নির্দেশ। গাঁয়ের উভয় পার্শ্বে বিস্তীর্ণ কৃষিক্ষেত্র। বর্ষায় স্লুইস গেট দিয়ে বন্যার পানি ফসলের ক্ষেতগুলোকে করে প্লাবিত, আবৃত করে পলিমাটিতে। অতিবৃষ্টিতে জমে যাওয়া পানি চলে যায় নদীতে। স্বল্পকালীন স্বার্থে নদীর স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করার নেই কোন অপচেষ্টা। জনপথগুলোর সাথে রয়েছে প্রকৃতির অপূর্ব সমঝোতা। এ যেন প্রকৃতিরই আর একটি প্রকাশ। এ বাংলার শিল্প কারখানা ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন জনপদে। যোগাযোগের জন্য রয়েছে একই সাথে নদী, সড়ক ও রেলপথ। বাঁধের উপরই নির্ধারিত দূরত্বে রয়েছে বিমান বন্দর। নদীর পাশে গড়ে উঠা জনপদের মানুষ হাসে, গান গায়Ñএ মানুষ স্বাস্থ্য, শিক্ষায় সমৃদ্ধ, নতুন সংস্কৃতি ও সভ্যতার আলোকে আলোকিত। তারা সমগ্র পৃথিবীকে বাঁচার নতুন পথ দেখায়। তারা সমগ্র পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেয়।
সোনার বাংলা শ্মশান হলো কেন? সে প্রশ্নের জবাব পেতে হলে আমাদেরকে যেতে হবে অনেক পেছনে। সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ইংরেজ উপনিবেশিক শক্তির আগমনের পর থেকেই। সে সময় থেকেই শুরু হয় স্বল্পমেয়াদী স্বার্থে প্রকৃতির সঙ্গে বিরুদ্ধাচরণের প্রক্রিয়া। ছোট বেলায় আমাদের ইংরেজী শাসনের সুফল পড়ানো হতো। সুফলগুলোর মধ্যে আমরা পড়েছি ইংরেজরা সড়ক, রেলপথ, টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপন করে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করে। বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে দেশে সুশাসনের ব্যবস্থা করে। ঔপনিবেশিক শক্তি একটি দেশে কোন কালেই সুফল আনতে পারে না। আমাদেও দেশের শিক্ষিত লোকেরা ইংরেজ শোষণের যে সুফল খুঁজে বের করেছেন নিঃসন্দেহে সেগুলোই বাংলাদেশের কৃষি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনীতি, শিক্ষা ও সভ্যতার ক্ষেত্রে বর্তমান অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে।
স্বল্প মেয়াদী ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সড়ক, রেলপথগুলো ব্যাহত করেছে নদীর স্বাভাবিক জলপ্রবাহ। পাকিস্তানী আমলে মৌলিক গণতন্ত্রের উন্নয়নের জোয়ারে কোন পরিকল্পনা ছাড়া তৈরী হয়েছে নানা সড়ক। জলপ্রবাহের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হওয়ার ফলে সমস্ত নদীগুলি আজ পলি মাটিতে ভরা। সমগ্র বাংলাদেশ আজ জলমগ্ন। স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা এখনও চলছে। স্বাধীন বাংলাদেশে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে গভীর নলকূপ প্রকল্প। পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদিত এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে সবুজ বিপ্লব সাধনের জন্য। কিন্তু কেউ ভাবছেন না এই প্রকল্প কয়েক বছর পর কৃষিক্ষেত্রে একটি বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটি প্রকৃতির সঙ্গে বিরুদ্ধাচরণের আর একটি প্রচেষ্টা। গভীর নলকূপের সাহায্যে উত্তোলিত পানিতে ব্যাপক খনিজদ্রব্য থাকা স্বাভাবিক যা চাষের জমির অশেষ ক্ষতি সাধন করতে পারে। এছাড়া ভূগর্ভ থেকে অতি পরিমাণ পানি উত্তোলন করলে সমুদ্রের লোনা পানি প্রবেশ করবে ভূগর্ভে এবং চাষের জমিকে করে দেবে লবণাক্ত। সোনার বাংলা গড়ার জন্য আজ প্রয়োজন ইংরেজ শাসনের আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদী স্বার্থে যে সমস্ত প্রকল্প গ্রহণ করে প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করা হয়েছে তা শোধরানো। প্রয়োজন জলপ্রবাহের স্বাভাবিকতাকে ফিরিয়ে আনা।
নদী আমাদের প্রাণ। বাংলার মানুষের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নদীর প্রবাহ আমাদের ভূমিকে করে উর্বর। নদীকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, শিল্প। নদী উপকূলেই প্রথম গড়ে উঠেছিলো জনপদ। সমাজ, শিল্প, সভ্যতা বিকাশের মাধ্যমে এই নদীকে ক্রমাগত ব্যাহত করে আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছি। সোনার বাংলা ফিরে পেতে হলে আমাদের ফিরে পেতে হবে সুস্থ, সবল ও গতিশীল নদী।
প্রকৃতিগতভাবে নদীর উভয় পার্শ্বে রয়েছে উঁচু পাড়। এর পাড়গুলির উভয় পাশের জমিগুলো বেশ নীচু। বর্ষায় এই জমিতে বন্যার জল প্রবেশ করে। এ কারণে বাংলার জমি অত্যন্ত উর্বর। ক্রমাগত নদীপ্রবাহকে ব্যাহত করার ফলে নদীগুলো ভরাট হয়ে গেছে এবং জল-ধারণের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ফলে এর প্রশস্ততা বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। নদীগুলিকে নাব্য করার জন্য প্রয়োজন:
১। যুগ যুগ ধরে স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সড়ক ও রেলপথগুলির গতিপথ পরিবর্তন করে নদীর সমান্তরালে আনা।
২। পলিমাটিতে ভরে যাওয়া নদীগুলিকে খনন করা এবং আঁকাবাঁকা নদীগুলির গতিপথ সোজা করে দেওয়া। নদীর উভয় পার্শ্বেই উঁচু কমপেক্ষে আধ মাইল প্রশস্ত বাঁধ নির্মাণ করা।
৩। নদীর জলপ্রবাহকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত করা, যাতে করে তলদেশে পলিমাটি জমতে না পারে। পলিমাটিকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে নিয়ে যাওয়া সমুদ্র উপকূলে। যাতে করে সমুদ্র থেকে ব্যাপক পরিমাণ জমি উদ্ধার সম্ভব হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে করে ২০ হাজার বর্গমাইল ভূমি উদ্ধার সম্ভব।
৪। নির্ধারিত দূরত্বে নদীর উভয় পাশে স্লুইস গেইট নির্মাণ করা যাতে বন্যার সময় বাঁধের উভয় পাশের সমতল ভূমিতে বন্যার জল প্রবেশ করতে পারে এবং অতিবৃষ্টিতে জমে যাওয়া অতিরিক্ত পানি নদীতে চলে যেতে পারে। শীতের সময় এগুলোর সাহায্যে নদীর পানি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যাবে।
৫। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা বিল ও হাওড়গুলো বাংলার স্বাভাবিক জলাধার। ক্রমাগত পলি জমার ফলে এগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে এসেছে এবং এগুলোর আয়তনও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বিল ও হাওড়গুলো খনন করতে হবে এবং চতুর্পার্শ্বে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এই জলাধারগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে সক্ষম হবে এবং সম্ভব হবে ব্যাপকহারে মৎস্য চাষ। শীতের মৌসুমে জলাধারের সঞ্চিত জল কৃষিকার্যে ব্যবহার করা যাবে।
নদী, খাল, বিল ও হাওড়গুলো সংস্কারের মাধ্যমে বাংলার চিত্র সম্পূর্ণ রূপে বদলে যাচ্ছে। এই সম্পূর্ণ পরিবর্তিত চিত্রে আমরা দেখি:
১। বাঁধের উভয় পার্শ্বের সমতলভূমি থেকে অবস্থানগত কারণে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গ্রামগুলো উঠে এসেছে বাঁধের উপর।
২। উভয় পাশের সমতলভূমি হয়ে উঠেছে বিস্তীর্ণ কৃষিক্ষেত্র, যাতে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে কৃষি কাজ চলছে। গড়ে উঠেছে যৌথ খামার। সম্পূর্ণ হয়েছে সবুজ বিপ্লব।
৩। উভয় পাশের নদী সংলগ্ন বাঁধটিকে রক্ষা করার জন্য রোপণ করা হয়েছে অসংখ্য বৃক্ষ। সৃষ্টি হয়েছে বিরাট বনসম্পদ।
৪। উভয় পাশের বাঁধের উপর গড়ে উঠেছে প্রশস্ত সড়ক ও রেলপথ, নির্ধারিত দূরত্বে বিমান বন্দর।
৫। বাঁধের উপর দিয়ে চলে গেছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন লাইন।
৬। এই বাঁধ দূর করে দিয়েছে শহর আর গ্রামের প্রভেদরেখা। এর উপর গড়ে উঠেছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, চিত্র-নাট্যশালা, হাসপাতাল ও শিল্প-কারখানা।
৭। বাঁধের উপর গড়ে ওঠা এই জনপদ একটি নতুন সভ্যতা ও সংস্কৃতির অধিকারী। সুশৃংখল এই জনপদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রেরণা দেয় সমগ্র পৃথিবীকে।
এই আমার সোনার বাংলার চিত্র। বর্তমান নৈরাজ্য ও হতাশার মাঝে এই চিত্রকল্পনা করে তোলে আমাকে আশাবাদী। আমি জানি এ চিত্র প্রেরণা দেবে। কারণ এ চিত্র রক্তাক্ত বিপ্লবের স্বাভাবিক ফলশ্রুতি। রক্তাক্ত বিপ্লব আমরা করেছি কিন্তু সোনার বাংলার চিত্র বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপও আমরা নেইনি। এই চিত্র বাস্তবায়ন কি সম্ভব?
এ চিত্র বাস্তবায়ন নিশ্চয়ই সম্ভব। এ চিত্র বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে বিপ্লবী জনগণ। বৈপ্লবিক কর্মপ্রেরণার জোয়ার আমরা দেখেছিলাম বাংলার জনগণের মাঝে স্বাধীনতার পর। জনগণের কর্মচেতনার অভাব নেই। আজ প্রয়োজন একটি বৈপ্লবিক জাতীয় পরিকল্পনার। বৈদেশিক সাহায্য, টাকা আনা, টেন্ডারের ভিত্তিতে পরিকল্পনা নয়। এই জাতীয় পরিকল্পনা হবে আদর্শগত ভিত্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত। এই জাতীয় পরিকল্পনা জাতীয় জীবনের সমগ্র সমস্যাকে সমাধানের জন্য সমগ্র জনশক্তি নিয়োগ ভিত্তিক পরিকল্পনা। সমগ্র জাতিকে এই পরিকল্পনা উপলব্ধি করতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে এবং এর বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এর প্রক্রিয়া হবে:
১। বৈপ্লবিক চেতনা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ নিয়ে জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন। বড় বড় নদী ও হাওড়গুলি পড়বে জাতীয় পরিকল্পনার অধীনে। ছোট ছোট নদী, খাল ও বিলগুলি পড়বে আঞ্চলিক পরিকল্পনায়।
২। বাংলাদেশের ঋতুকে দুভাগে ভাগ করা যায় বর্ষাকাল ও শীতকাল। বর্ষাকাল পরিকল্পনা প্রণয়ন, বিগত কাজের ভুলভ্রান্তি নির্ধারণ ও নতুন কর্মসূচী গ্রহণের প্রকৃষ্ট সময়। শীতকাল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শ্রমশক্তি নিয়োজিত করার প্রকৃষ্ট সময়।
৩। নদী, নালা, হাওড়, বিলগুলির বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করতে হবে কর্মীশিবির। নভেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশের সমস্ত সুস্থ-সবল ব্যক্তিকে এই কর্মীশিবিরে যোগ দিতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এ সময় বন্ধ থাকবে। দৈনন্দিন কাজ চালাবার জন্য নূন্যতম লোক নিয়োজিত করা হবে।
৪। কর্মীশিবিরগুলিতে: ব্যবস্থা থাকবে বিনামূল্যে খাবারের, নূন্যতম দৈনিক মজুরীর ও চিকিৎসার। ছাত্র ও শহরের লোকদের বাধ্যতামূলকভাবে যোগ দিতে হবে এই শিবিরে। গ্রামের চাষীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতে অংশ নেবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাদের প্রগতিশীল চরিত্র সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পেয়েছে।
৫। এই কর্মীশিবিরগুলির প্রশাসনের জন্য নিয়োজিত করা হবে সেনাবাহিনী, বি.ডি.আর. ও পুলিশ বাহিনী। এই সশস্ত্র বাহিনীগুলো জনগণের সান্নিধ্যে ও কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে সুযোগ পাবে আত্মশুদ্ধির ও তারা রূপান্তরিত হবে গণবাহিনীতে।
এই কর্মীশিবিরগুলো কেবলমাত্র শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের জন্য নয়। এই কর্মীশিবিরে দেওয়া হবে গণশিক্ষা, গণচিকিৎসা; পরিচিত করানো হবে পরিবার পরিকল্পনার সাথে, নারী মুক্তি আন্দোলনের সাথে। এই কর্মীশিবির মুছে দেবে উঁচু-নীচু প্রভেদ। ধনীকে ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী যারা আজ দরিদ্র কৃষক শ্রমিকের মাথার বোঝা, এই কর্মীশিবিরে তারা একাত্ম হবে তাদের সঙ্গে। এই কর্মীশিবির পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি শিবির।
সূত্র:
সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগের পর কর্নেল তাহের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৭৩ সালে চুক্তি ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার সংস্থার পরিচালক পদে নিযুক্ত হন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে লোকাসানি এ প্রতিষ্ঠানকে তিনিই প্রথম লাভজনক করেন। সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানের সময় পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন তিনি। পরিচালক থাকাকালীন ১৯৭৩ সালে ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ পত্রিকায় তিনি তাঁর মতামত প্রকাশ করেন।
ক্স ‘সমগ্র জাতির মধ্যে আমি প্রকাশিত’; আবু তাহেরের ৭৩তম জন্মদিন ও সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানের ৩৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে কর্নেল তাহের সংসদের স্মারক প্রকাশনা। (১৪ নভেম্বর, ২০১১)।