
ভূমিকা
মুক্তিযুদ্ধ
তাহের জানতেন একটি সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমেই বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। সে লক্ষ্যেই তিনি তাঁর জীবনটি সাজিয়েছিলেন। প্রথম প্রচেষ্টায় সেনাবাহিনীতে ঢুকতে না পারলেও দ্বিতীয় চেষ্টায় তিনি ঠিকই সফল হন এবং একজন প্রথম শ্রেণীর প্যারা কমান্ডো হিসেবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন। তাহের শুধু নিজেকে প্রস্তুত করেননি, তিনি তাঁর পুরো পরিবারের মধ্যে ঢুকিয়েছিলেন ‘মুক্তির’ বীজ। চরম ঝুঁকি নিয়েই ৬০ দশকের শেষের দিকে সিরাজ শিকদারের রাজনৈতিক অনুসারীদের তাহের দিয়েছিলেন সামরিক প্রশিক্ষণ। এমন এক পরিস্থিতিতেই চলে আসে ২৫শে মার্চ, ১৯৭১। শুরু হয়ে যায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, যে যুদ্ধকে তাহের উপলব্ধি করেছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। যুদ্ধক্ষেত্রে ছোট ভাইদের তাঁকে ‘ভাইজান’ না ডেকে ‘স্যার’ ডাকতে নির্দেশ দিয়েই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি। তাহের প্রথাগত যুদ্ধের বদলে গেরিলা যুদ্ধের নীতি গ্রহণের যুক্তি তুলে ধরেন সেক্টর কমান্ডারদের কনফারেন্সে। নিজ সেক্টরের হেড কোয়ার্টারে খোলেন শুধুমাত্র গরিব কৃষকদের নিয়ে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর মুক্তিবাহিনীর নির্ভরশীলতা কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতেন তাহের। সেই চিন্তার ফলশ্রুতিতেই তিনি ওসমানীকে প্রস্তাব দেন সকল সেক্টর হেড কোয়ার্টার্স ভারতের মাটি থেকে বাংলাদেশের মাটিতে স্থানান্তরিত করার। কামালপুর (যা তাহের চিহ্নিত করেছিলেন ‘ঢাকার প্রবেশদ্বার’ হিসেবে) সম্পর্কে তাহেরের মূল্যায়ন সঠিক ছিল। ১৪ই নভেম্বর ১৯৭১ সাল-যুদ্ধক্ষেত্রে তাহেরের শেষ দিন। সেদিন তাহেরের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক কামালপুর যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাফল্য সিদ্দিক সালিক তাঁর ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইতেও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। পা হারানো তাহের যুদ্ধের ময়দান থেকে বিদায় নেওয়ার আগ মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি তোমাদের অল্প সময়ের জন্য ছেড়ে যাচ্ছি। কিন্তু ফিরে এসে যেন দেখি কামালপুর দখল হয়েছে। আর ঢাকা যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার।’